আঞ্চলিকশীর্ষ নিউজ

মহাকবি মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী সাগরদাঁড়ী সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা উদ্বোধন

মালিক উজ জামান, যশোর : যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে মাইকেল মধূসুদন দত্ত্ব মহাকবি পৈতৃক বাড়ি ২৫ জানুয়ারি বুধবার সপ্তাহব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে। এদিন বিকালে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ প্রধান অতিথি হিসাবে এই মধু মেলা উদ্বোধন ঘোষনা করেন।
অমিত্রাক্ষর ছন্দের জনক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৯তম জন্মবার্ষিকী (২৫ জানুয়ারি)। মধুকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্মভূমি যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার আয়োজন করা হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে। দীর্ঘ তিন বছর পর এবার মেলা। তাই মধু মেলা ঘিরে এবার আয়োজন ও উপস্থিতি প্রানবন্ত।
বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ আধুনিক বাংলা কাব্যের রূপকার, ছন্দের প্রবর্তক ও সনেট রচয়িতা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এর ১৯৬ তম জন্মবার্ষিকী ২৫ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে কবির জন্মভূমি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) থেকে আয়োজন করা হয়েছে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা। এদিন বিকাল সাড়ে ৩ টায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে মধুকবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
মধুকবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি, সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, সংসদ সদস্য মোঃ নাসির উদ্দিন, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার পিপিএম, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি, কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম, কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা প্রশাসক মো: তমিজুল ইসলাম খান।
মেলা উপলক্ষে সাগরদাঁড়ি মধুমঞ্চে প্রতিদিন কবির জীবনি ও তাঁর সাহিত্যকর্ম এবং সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাছাড়াও মেলায় উস্মুক্ত মধুমঞ্চে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি যাত্রাপালা, সার্কাস, মৃত্যুকুপে গাড়ি চালানো, যাদু প্রদর্শনী ও বিচিত্রা অনুষ্ঠানের আয়োজনও থাকছে। এর পাশাপাশি মেলার মাঠে বিসিক ও গ্রামীণ পণ্যের ছোট বড় প্রায় দুই হাজার স্টল বসছে। ইতোমধ্যে কবির জন্মগৃহ, মধুপল্লী, মধুমঞ্চ, পর্যটন কেন্দ্র ও সাগরদাঁড়ির ডাকবাংলো ঘষামাজা করে চুনকাম করে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।ৎ
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার মাঠসহ আশপাশ এলাকায় সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবে টহল দিচ্ছে। সংষ্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত অবধি মধুমঞ্চে চলবে আলোচনা, নাটক, যাত্রাপালা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। করোনা মহামারির কারণে তিন বছর পর মধুমেলা শুরু হওয়ায় মধুপ্রেমীদের আগ্রহ অনেক বেশি। তাই মেলাকে সার্থক করতে ব্যস্ত সময় পার করছে আয়োজক কমিটি। দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি।
মধুকবির জীবনী
১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি। শীতের পরশ সাগরদাঁড়ি প্রকৃতির অঙ্গ জুড়ে। হঠাৎ ভেতর বাড়ির কোণের ঘরে উলুধ্বনি-শঙ্খধ্বনি। কাটিপাড়ার জমিদার গৌরীচরণ ঘোষের কন্যা জাহ্নবী দেবী আঁতুর ঘরে পুত্র সন্তান প্রসব করেছেন। এরমধ্যে কলকাতার খিদিরপুর থেকে কর্তাবাবু রাজনারায়ণ দত্ত ফিরলেন। পুত্র ভূমিষ্ঠ হওয়ার সংবাদ শুনে আত্মহারা হয়ে গেলেন। পুত্রের জন্য সোনার চেন-বোতাম, পোশাক-আশাক, খেলনাগাড়ি, জুড়ি-টুড়ি বজরা বোঝাই করে আনলেন। দত্তবাবু পুত্র সন্তান লাভ করায় প্রজাদের ওপর রাজস্ব হ্রাস করলেন খুশি হয়ে। বাড়িতে পুত্রের মঙ্গল কামনায় বেশ ক’দিন চলল ভোজ উৎসব। বেশ কয়েকদিন কাটল আনন্দ উৎসবে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ঘটা করে ভেবে-চিন্তে নাম দিলেন মধু। শ্রী মধুসূদন দত্ত।
শিশুকালে মধুর হাতে খড়ি হয়েছিল তাদের বাড়ির চ-ীম-পে। এরপর তিনি তার গ্রামের নিকটবর্তী শেখপুরা গ্রামের এক মৌলভী শিক্ষকের কাছে ফরাসি শিখতে যেতেন। চ-ীম-পে ও মৌলভী শিক্ষকের শিক্ষায় তার প্রাথমিক ভিত্তি রচিত হয়েছিল। ১৮৭৩ সালে মধু হিন্দু কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৪১ সাল পর্যন্ত সেখানে ইংরেজি ও ফরাসি অধ্যয়ন করেন। এই সময় খিদিপুরে তাদের নিজের বাড়িতেই তিনি বসবাস করতেন।
১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কবি মধুসূদন খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত হন এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। এ সময় তিনি হিন্দু কলেজ পরিত্যাগ করে শিবপুরস্থ বিশপস্ কলেজে ভর্তি হন এবং চার বৎসর সেখানে অধ্যয়ন করেন। এখানে অধ্যয়নকালে তিনি গ্রিক, ল্যাটিন, ফরাসি ও হিব্রু প্রভৃতি ভাষা আয়ত্ব করেন।
মাইকেল মাদ্রাজ থেকে কলকাতায় ফিরে এসে কবি দেখলেন, তার পিতা-মাতা ইতঃপূর্বেই ইহজগৎ ত্যাগ করেছেন এবং তাদের অনেক সম্পত্তি অন্যরা দখল করে নিয়েছে। অগত্যা মধুকবি পুলিশ আদালতে সামান্য কেরানির চাকরি গ্রহণ করেন।
জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি। এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্য রচনা করতে শুরু করেন। মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ নামক মহাকাব্য। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরে বসে মহাকবি লিখেন তার ‘কপোতাক্ষ নদ’ এবং ‘বঙ্গভাষা’র মতো বিখ্যাত কবিতা। বাবা রাজনারায়ণ দত্তের বিশাল জমিদারি থেকে কবি বঞ্চিত হয়ে একপর্যায়ে কপর্দকহীনভাবে কলকাতায় ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button