চট্টগ্রামশীর্ষ নিউজ

অভিযোগের পাহাড়, তবুও বহাল তবিয়তে তহসিলদার আহমদ নুর

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) আহমদ নুরের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠেছে। মিছ মামলার প্রতিবেদন দিতে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের খুশি করতে হয়। এমন অজুহাতে হাজার হাজার টাকা দাবি করার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগের পরও স্বপদে থেকে দিব্যি দুর্নীতি করে যাচ্ছেন তহশিলদার আহমদ নুর। বরং প্রতিকার না হওয়ায় নুরের সিন্ডিকেটের কাছে এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।

একজনের জমি আরেকজনের নামে বন্দোবস্ত, জবরদখল, ভূমিহীন পরিবারের বসতভিটা অন্যের নামে বন্দোবস্ত দেয়া, একই জমি থেকে একাধিকবার মালিকের নাম খারিজ করে দেয়াসহ প্রকাশ্যে চলছে তার ঘুষ-বাণিজ্য। ভারপ্রাপ্ত হয়েও তিনি এখন রাজা।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ও দুদকের কাছে অভিযোগকারী ইপিজেড এলাকার মোঃ মোছলেম উদ্দিন জানান, আদালতের একটি মিছ মামলায় প্রতিবেদন দিতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছেন আহমদ নুর। পরে ২৫ হাজার নিয়েও বাদির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিলেন তহসিলদার। এতে বিবাদীর পক্ষ থেকে মোটা অংকের সুবিধা নিয়েছেন বলে ভুক্তভোগির অভিযোগ। এর আগেও আহমদ নুর অপর মিছ মামলায় দুই স্মারকে বাদি-বিবাদী দুজনের পক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন।

তাছাড়াও খাজনা আদায় ও জমাজমির নানা রকম তদন্তে অনিয়ম, দুর্নীতি, তদন্তের নামে হয়রানি ভয়ভীতি ও হয়রানিসহ অনিয়মের নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি জমা-জমির দাগ, খতিয়ান যাচাই-বাছাই পরিদর্শনে জমির মালিকদের নিকট টাকা হাতিয়ে নেয়া নিত্যদিনের ব্যাপার।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোঃ জহুরুল আলম নামে এক ব্যক্তি চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (মহানগরে) একটি মিছ মামলা (নং-১০১৪/২২) দায়ের করেন।
আদালত বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কর্ণফুলী সহকারি কমিশনার ভূমিকে নির্দেশ দেন।

সহকারি কমিশনার ভুমি সংশ্লিষ্ট জুলধা ইউনিয়নের তহশিলদার আহমদ নুর কে দায়িত্ব দিলে তিনি উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদান করেন। মামলার বাদি বয়ষ্ক লোক হওয়ায় তার পরিবর্তে মেয়ের জামাতা মোঃ মোছলেম উদ্দিন হাজির হন।

কয়েকবার হাজির হওয়ার পর এক পর্যায়ে ভূমি কর্মকর্তা আহমদ নুর প্রস্তাব দেন আদালতের আদেশমূলে একটি প্রতিবেদন দিতে অনেক খরচ আছে। উচ্চ পদস্থ অফিসার থেকে শুরু করে নিচু পদস্থ সবাইকে খুশি করতে হয়। টাকা না দিলে কোন কাজ হবে না।

পরে তহসিলদার ৫০ হাজার টাকা চাইলেও দফারফা করে ভূমি অফিসের কয়েকজনের সামনে ২৫ হাজার টাকা দিতে হলো ভূক্তভোগী মোছলেম কে। কিন্তু প্রতিবেদন দিতে তহসিলদার আরও ১৫ হাজার টাকা দাবি করলেন।

বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর তহসিলদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছেন। কর্ণফুলী সহকারি কমিশনার ভূমি অফিসে দাখিল করা রিপোর্ট দেখে তো বাদির চক্ষু চড়ক গাছ। প্রতিবেদনে বাদি পক্ষের দলিল ও দখল বিষয় উপস্থাপন করা হয়নি। পরে টাকা ফেরত চাইলে তহসিলদার অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন ভুক্তভোগীকে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত জুলধা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার আহমদ নুরের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করা হয়নি। পরে হোয়াটস অ্যাপসে অভিযোগের কপি পাঠিয়ে কল করা হলেও তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর আর কল রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ জানান, ‘ভূমি বিষয়ে ভুক্তভোগিদের সব অভিযোগ যাছাই বাচাই করে সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ডদের কাছে পাঠানো হয়। তখন তাঁরা বিষয়টি জেনে আইনি ব্যবস্থা নেন।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button