বিশেষ খবররাজনীতি

সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ করাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব।

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুন বাংলাদেশ (এফইএস, বাংলাদেশ) যৌথভাবে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মূল অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছেন সিজিএস’র নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এফইএস, বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সাধন কুমার দাস। তিন পর্বের এ অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে ছিল ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বক্তৃতা, দ্বিতীয় অংশে হাইকমিশনারের সঙ্গে একটি আলোচনা পর্ব, যেখানে অর্থনীতি, বাণিজ্য, রাজনীতি, সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহুপাক্ষিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব, যেখানে উপস্থিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা হাইকমিশনারকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।

বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন প্রসঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ করাটা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি সব নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, সঠিকভাবে ভোটগণনা, এবং নির্বাচনের ফলাফল সবার দ্বারা সমর্থিত হওয়ার বিষয়গুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে প্রশ্ন করলে রবার্ট সি ডিকসন বলেন, বাংলাদেশে কাজ করা অন্যান্য রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বেশ ভালো আলোচনা হয়েছে। আমরা নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার নির্বাচন দেখেছি। সেখানে কিছু সমস্যা ছিল, তবে তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে, যাতে প্রার্থীদের ভালো অংশগ্রহণ ছিল। এটি একটি ইঙ্গিত যে বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে ভালো নির্বাচন সম্ভব।

রোহিঙ্গা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাজ্য কাজ করে যাচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে। বর্তমানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মতানৈক্যর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিষয়টি সমাধান সহজ হচ্ছে না। এখনই বলা যাবে না যে এ সংকট কতদিনে সমাধান করা যাবে। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, কূটনীতিক হিসেবে আমাদের সবার সঙ্গে কথা বলার অধিকার রয়েছে। কূটনীতিক হিসেবে আমি আইনসীদ্ধ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলতে চাই। এভাবেই একজন কূটনীতিক স্বাগতিক দেশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারেন। আর বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাণিজ্যের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের মতাদর্শগুলো জানানো আমার অধিকার।

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে আইন রয়েছে, অন্য কোনো দেশের সরকারি কর্মচারী যদি লন্ডনের মতো জায়গায় হঠাৎ করে এসে বাড়ি কেনেন, তবে যুক্তরাজ্য তার কাছে অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে চায়। যত কম সম্ভব অবৈধ অর্থ প্রবেশে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যুক্তরাজ্য।

মানবাধিকার নিয়ে জানতে চাইলে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রশ্ন রয়েছে। এ নিয়ে আমরা বার্ষিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করে থাকি। বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের প্রশ্ন রয়েছে মুক্তভাবে রাজনীতি করার পরিবেশ নিয়ে, বাকস্বাধীনতা নিয়ে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। আর নতুন বাণিজ্যনীতি, যুক্তরাজ্য যেটি ঘোষনা করেছে, তার সঙ্গে মানবাধিকারের বিষয়গুলো জড়িত। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারও এখানকার মানবাধিকার নিয়ে বলে গেছেন, যা আমরা সবাই বলে থাকি। প্রশ্ন ওঠা বিষয়গুলোতে উন্নয়ন দেখতে চাই।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদের এ আইনের প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশে এ আইন রাজনৈতিক বিরোধী মত চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। তবে এ আইনের বিষয়টি বর্তমানে পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে, বিষয়টি আশার।

রবার্ট সি ডিকসন তার বক্তব্যে বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রতিরক্ষা, সমুদ্র, রোহিঙ্গা সমস্যা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় তিনি এলডিসি থেকে উত্তোরণের পর ডিসিটিএস-এর আওতায় বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণ করার ক্ষেত্রে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক গুণগত মান বাড়ানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা এই দুই বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button