অর্থ ও বাণিজ্যবিশেষ খবর

তুলশীমালা চালে ভেজাল ঠেকাতে উদ্যোগী প্রশাসন

জুড়ি নেই শেরপুর তুলশীমালা চালের। রঙরূপ, সুগন্ধে বর্ণে কুলীন অনন্য তুলশীমালা শেরপুরের অমূল্য রত্ন। এই চাল দেখতে ছোট মিহি, রয়েছে বাহারি সুগন্ধ। তুলশীমালাকে জামাই আদুরি চালও বলা হয়। জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সম্প্রতি এই চাল ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। পেয়েছে ব্যাপক সমৃদ্ধি।

দামি হলেও বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা। এই সুযোগে বেশি মুনাফা পেতে কতিপয় ব্যবসায়ী,পাইকার,ফরিয়া মিলে অভিজাত এই চালে সুগন্ধি জাতীয় পাউডার সাথে অন্য চাল মিশিয়ে ভেজালের কলঙ্ক মেখে দিচ্ছে। এই কলঙ্ক রোধ করতে জেলার কৃষি ও জেলা প্রশাসন অভিনব ব্যবস্থা নিতে প্রস্তত হচ্ছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসারি ধান কিনে, নির্দিষ্ট মিলে চাল করে দেশব্যাপী বাজারজাত করা হবে।

ধান ক্রয়, চাল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে কৃষি বিভাগ প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করবে। কুলীন এই চালের মর্যদা অক্ষুণ্ন রাখতে স্থানীয় প্রশাসন বদ্ধ পরিকর বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ অনুসন্ধানে জানা গেছে সেন্টু ,গোল্ডেন ও তুলশীমালা এক সাথে মিশিয়ে ক্ষতিকর সুগন্ধি মেখে অথবা চিকন আতপ চালে সুগন্ধি মিশিয়ে তুলশীমালা নামে বিক্রি হচ্ছে। বেশ কিছু মিল মালিক, ফরিয়া,পাইকার এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। সূত্র জানিয়েছে, বাজারে এখন প্রকৃত তুলশীমালা পাওয়া দুষ্কর। যে পরিমাণ তুলশীমালা শেরপুর জেলায় উৎপাদন হয় তার চেয়ে অন্তত দশ গুণ চাল তুলশীমালা নামে বিক্রি হচ্ছে।

শোনা যায় এই চালের খাবার রান্নায়, এলাকা জুড়ে সুগন্ধ ছড়াতো। একদা জমিদার অধ্যূষিত শেরপুরের জমিদার কর্তারা এই চালের সুস্বাদু খাবারে অভ্যস্থ ছিল। জমিদারদের বাড়িতে লাট সাহেবরা আসলে তুলশীমালা চালের বাহারি খাবার পরিবেশ করা হতো। তুলশীমালা ছিল জমিদারদের বিশেষ অভিজাত আতিথিয়তার কৌশল। লাট রমণীদের জন্য এই চাল পাঠানোর দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। নিকটজন কাউকে তুলশীমালা উপহার দেওয়া এই রীতি শেরপুরে এখনও চালু আছে। আর নতুন জামাই আসলে অবধারিত তুলশীমালার পোলাও, খিচুরি, পায়েস, পিঠা থাকতেই হবে।

কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের অক্লান্ত পরিশ্রমে শেরপুরের প্রাচীন ইতিহাসের ঐতিহ্য এই চাল ব্রান্ডিং হয়। ফলে চাহিদা ও উৎপাদন বাড়ে যায় তরতর করে। বড় চাল ব্যবসায়ীরা এই চাল কিনতে অগ্রিম বিনিয়োগ করে। এই সুযোগে অধিক মুনাফা পেতে এই চালে কলঙ্ক এঁকে দিচ্ছে কেউকেউ। স্থানীয়রাও এখন পাচ্ছে না আসল তুলশীমালা। তবে অভিজাত ভোজন রসিকরা প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনে, চাল করে তুলশীমালার স্বাদ নিচ্ছে। সূত্র জানায়, এক কৌটা রাসায়সিক পাউডারে অন্তত ১০টন চাল তুলশীমালার মত সুগন্ধি করা হচ্ছে। এখন ভেজালমুক্ত এক কেজি তুলশীমালা চালের দাম অন্তত ১৪০ টাকা। আর ভেজাল তুলশীমালা বিক্রি হচ্ছে  ১১০ টাকা। এক মণ তুলশীমালা দাম ২৮ থেকে ২৯শ টাকা। আর সেন্টু পাইজাম ধান ১৩ থেকে ১৪শ টাকা, গোল্ডেন ধানের দাম ১৬ থেকে ১৭শ’ টাকা। সেন্টু ও গোল্ডেন তুলশীমালার সাথে মিশিয়ে সুগন্ধি মিশিয়ে তুলশীমালা বলে ১১০ টাকা কেজি দরে, আর শুধু গোল্ডেন, সেন্টু ও কালিজিরা চালে সুগন্ধি পাউডার মিশিয়ে তুলশীমালা বানিয়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ১০০ টাকার নীচে।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.সুকল্প দাস বলেছেন, ক্রেতাদের যৌক্তিক দামে আসল তুলশীমালা সরবরাহ করতে প্রশাসন ওই ব্যবস্থা নিচ্ছে। ব্যাগের গায়ে একটি কোড নাম্বার থাকবে। ওই কোড নাম্বার দিয়ে ক্রেতারা চালের আদি-অন্ত জানতে পারবে। চলতি বছরেই সীমিত পরিসরে বাজারে আসবে এই প্রক্রিয়ার আসল তুলশীমালা।

জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেছেন কোন অবস্থাতেই শেরপুরের বিশেষ ব্র্যান্ড অভিজাত তুলশীমালাকে রক্ষা করা হবে। দ্রুতই জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় বিশুদ্ধ তুলশীমালা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button