আঞ্চলিকশীর্ষ নিউজ

যশোরে নিহত যুবলীগ কর্মী রিপন গ্রুপ রাজনীতির শিকার,খুনিদের নাম পরিচয় ফাঁস

যশোর শহরে যুবলীগ কর্মী রিপন হোসেন গ্রুপ রাজনীতির শিকার। তাকে  দলীয় প্রতিপক্ষ গ্রুপের সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। রিপনের সঙ্গে থাকা বিপুল ও মোস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক এসময় আত্ম রক্ষার্থে দৌঁড় দেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা ধাওয়া করে তাদেরও ছুরিকাঘাত করে। তাদের বাঁচাতে স্থানীয় দোকানীরা ছুটে আসলে সন্ত্রাসীরা সেন্ট্রাল মুজিব সড়ক ব্যবসায়ী সমিতির অফিসের সামনের গ্লাস ভাঙচুর করে এমএম কলেজ ক্যাম্পাস দিয়ে পালিয়ে যায়। হতাহতরা এমপি নাবিলের অনুসারী নামে পরিচিত। অন্যদিকে, কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সন্ত্রাসীরা জেলা আওয়ামী লীগের অপর গ্রুপের অনুসারী। সোমবার (১৬ অক্টোবর) রাত ৮টার পরপরই মুজিব সড়কে পঙ্গু হাসপাতালের অদূরে নিহত রিপন হোসেন খড়কি ধোপাপাড়ার হাবিবুর রহমান ওরফে বুড়ো মিয়ার ছেলে। পেশায় তিনি লেদ মিস্ত্রি ছিলেন। খড়কিতে যুবলীগের ভুট্টো বাহিনীর ক্যাডার ও এমপি নাবিলের অনুসারী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে নিহত রিপনের।

প্রত্যক্ষদর্শী সেন্ট্রাল মুজিব সড়ক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এসএম রাজীব জানান, রাত ৮টার দিকে মুখ বাঁধা কয়েকজন সন্ত্রাসী মুজিব সড়কের পঙ্গু হাসপাতাল এলাকা থেকে কয়েক যুবককে ধাওয়া করে। এরমধ্যে এক যুবককে বেবি শপ নামে একটি দোকানের সামনে ধারালো দা দিয়ে কোপানো হয়। তখন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাঁচানোর চেষ্টা করলে হামলাকারীরা সমিতির অফিসের সামনের দরজার গ্লাস ভাংচুর করে। এরইমধ্যে সন্ত্রাসীদের মধ্যে কয়েকজন ধাওয়া করে আরেক যুবককে আশা এন্টারপ্রাইজের পাশে তাড়ং নামে একটি দোকানের সামনে রাস্তায় ফেলে সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাত করে।

খড়কির বাসিন্দা কালু মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, হতাহতরা স্থানীয় ভুট্টোর সাথে যুবলীগের রাজনীতি করেন। তারা এলাকায় এমপি নাবিলের অনুসারী নামে পরিচিত। অন্যদিকে, হামলাকারীরা সন্ত্রাসী ডিকুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে যায়। তারা আওয়ামী লীগের অপর গ্রুপের অনুসারী নামে পরিচিত। গ্রুপ রাজনীতির কারণে স্থানীয়ভাবে তাদের বিরোধ রয়েছে। তবে সূত্র জানায় ডিকু বাহিনীর সাথে বহিরাগত চিহ্নিত কয়েকজন সন্ত্রাসী ছিল। তারা প্রকাশ্যেেই ঘোরাফেরা করছে।

প্রায় একই অভিযোগ করেছেন নিহত রিপনের বোন নিলুফর ইয়াসমিন। তিনি জানান, এলাকার আধিপত্য নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আক্তারুজ্জামান ডিকুর সাথে তাদের বিরোধ চলে আসছিলো। তারই জের ধরে ডিকু বাহিনীর লোকজনে রিপনকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। সোমবার রাত ৮টার দিকে রিপন, মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক ও বিপুল রিকশাযোগে রেলগেট থেকে বাড়ি ফিরছিল। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডিকুর নেতৃত্বে হাসিব, ছাকলাইন, ইমন, জিসান, পিচ্চি রাজা, খোলাডাঙ্গার দেলো, ষষ্ঠিতলার নিশান ও সবুজসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী দুইটি ইজিবাইকে করে মুজিব সড়কে অবস্থান নেয়। বেবী শপের সামনে আসা মাত্রই রিপন-বিপুল ও মোস্তাকের রিকশার পথরোধ করে বাক-বিতন্ডা শুরু করে। এক পর্যায়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রিপনকে হত্যা ও বিপুল এবং মুস্তাককে আহত করে। তিনি আরও বলেন-খুনিরা তসবীর হল এলাকায় ওঠা-বসা করে বলে শুনেছি।

যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত খড়কীর ভুট্টো জানান, রিপন পেশায় লেদ মিস্ত্রি। সম্প্রতি একটি শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে আমাদের সাথে যশোর শহরে গাড়িখানায় গিয়েছিলেন রিপনসহ হতাহতরা। ওইদিন আওয়ামী লীগের চিহ্নিত একদল সন্ত্রাসী রিপনকে ধমকায়। তারা রিপনকে দেখে নেয়ার হুমকিও দেয়। এমপি নাবিলের মিছিলে আসলে কপালে দুঃখ আছে বলেও তারা জানিয়ে দেয়। আজ তারাই মুজিব সড়কে পেয়ে রিপনকে হত্যা ও বিপুল-মুস্তাককে কুপিয়ে জখম করেছে।

রিপনের সাথে রিকশায় থাকা মুস্তাক পুলিশ হেফাজতে যাওয়ার আগে হাসপাতাল মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে আর্তনাত করছিলেন। তিনিও আক্রমণের শিকার দাবি করে সাংবাদিকদের জানান, মূলত রিপনকে নয়, তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা। রিপন বাঁচাতে এসে সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পড়ে ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায়-মুস্তাক সাংবাদিকদের এসব কথা বলার পরই ডিবি পুলিশের এসআই সোলাইমান আক্কাস তাকে তুলে নিয়ে যান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়-তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি হেফাজতে নিয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও হাসপাতালে যাওয়া পুলিশ পরিদর্শক চাঁচড়া ফাড়ির ইনচার্জ তারিকুল ইসলাম জানান, সংঘবদ্ধ চক্রের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন রিপন। তবে কেন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এর আগে, হতাহত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক-সার্কেল জুয়েল ইমরান, কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল আলম চৌধুরীসহ ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হন। পুলিশ স্থানীদের সাথে কথা বলে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সন্ত্রাসীদের নাম পরিচয় নিশ্চিত হয়ে অভিযানে মাঠে নেমে পড়েছে। কথিত যেসব বড়ভাই এসব সন্ত্রাসীদের শেল্টার দাতা, তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারীর মধ্যে রয়েছে জানিয়ে ডিবির একটি সূত্র জানায় সামনে নির্বাচন, উপরের নির্দেশ রয়েছে অপরাধী যেই হোক তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সূত্রের দাবি-রাত পোহানোর আগেই হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button